অসহায়ের সহায় তিনি
অসহায় ও বিপদে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে বিনা মূল্যে নাক, কান ও গলার অস্ত্রোপচার থেকে শুরু করে গরিব মানুষদের শীতবস্ত্র, ঈদস মন্ত্রী ও সেলাই মেশিন বিতরণ করেন তিনি। দেন আলোকিত মা-বাবাকে সম্মাননা'। গরিব রোগীদের সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে কানের পর্দা জোড়া লাগিয়ে দেন। ঘর নির্মাণে টিন প্রদান, গভীর নলকূপ স্থাপন সবকিছুই করেন তিনি । এসব করছেন চিকিৎসক নূরুল হুদা ওরফে নাঈম।
নূরুল হুদা সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক, কান, গল' ও হেড-নেক সার্জারি বিভাগের প্রধান। এ ছাড়া হাসপাতালটির কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট কার্যক্রমের তিনি প্রোগ্রাম পরিচালক। বাড়ি গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বর খমিয়াপাতন গ্রামে। বাবা আবদুল লতিফ ও মা বেগম নূরজাহান উভয়েই শিক্ষক ছিলেন। সিলেট নগরের কাজলশাহ এলাকায় আছে তাঁর প্রতিষ্ঠিত এনজেএল ইএনটি সেন্টার। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানও। এ ছাড়া চালাচ্ছেন এনজেএল ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। গোলাপগঞ্জের ভাদেশ্বর কলেজের ভূমিদাতা ও আজীবন দাতাসদস্য হিসেবে তিনি আছেন।
ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সাল থেকে ধারবাহিকভাবে নূরুল হুদা ৩০ ডিসেম্বর 'আসুন জন্মদিনে একটি ভালো কাজ করি' স্লোগানে অন্তত ১০ জন গরিব ও দুস্থ রোগীর বিনা মূল্যে কানের পর্দা জোড়া লাগিয়ে আসছেন। রোগীর চাপ বেশি থাকায় পরবর্তী সময়ে তা ১০ থেকে বেড়ে ১৫-তে দাঁড়ায়। এ ছাড়া প্রতি ছাব্বিশে মার্চ স্বাধীনতা দিবসের দিন ১০ জনের বিনা মূল্যে ইএনটির যেকোনো অস্ত্রোপচার, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিন ১০ জনের বিনা মূল্যে ইএনটির যেকোনো অস্ত্রোপচার করা হয়। এ ছাড়া ব্যয়বহুল ক্যানসার অপারেশন থেকে শুরু করে এন্ডোসকপিক সাইনাস অস্ত্রোপচারও তিনি বিনা মূল্যে করে আসছেন। এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ শ রোগীর বিনা মূল্যে অস্ত্রোপচার নূরুল হুদা করেছেন।
একই সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন দিবসে শোভাযাত্রা, সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম আয়োজনের মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরি করেন নূরুল হুদা। প্রতিবছর ১০ জন গর্বিত মা-বাবাকে সম্মাননা দেয় ফাউন্ডেশন। এ ছাড়া নূরুল হুদা নিজের গ্রামের কোনো রোগীর কাছ থেকে চিকিৎসা বাবদ কখনোই কোনো টাকা গ্রহণ করেন না।
২০১৬ সাল থেকে 'ফ্রি হ্রাইডে' ক্লিনিক পরিচালনা করছে এনজেএল ফাউন্ডেশন। মাসে দুই দিন এই কার্যক্রম চলে। দরিদ্র মানুষ এলাকার মসজিদের ইমাম কিংবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের প্রত্যয়নপত্র দেখিয়ে বিনা পয়সায় নাক, কান ও গলার চিকিৎসা নেওয়া যায়। এ ছাড়া প্রায়ই ফাউন্ডেশন সপ্তাহব্যাপী ফ্রি হিয়ারিং স্ক্রিনিং টেস্টের আয়োজন করে থাকে। এখন পর্যন্ত হাজারো মানুষ এ সেবা নিয়েছেন।
নূরুল হুদা নাঈম জানান, অসহায় ও বিপাকে পড়া মানুষকে সহায়তা দেওয়াই হচ্ছে এনজেএল ফাউন্ডেশনের কাজ। ভবিষ্যতে তিনি প্রতি সপ্তাহে বিনা মূল্যে একটি অস্ত্রোপচার করতে চান, যেখানে রোগীদের খাওয়াদাওয়া সরবরাহসহ যাবতীয় খরচ করা হবে । এ ছাড়া একটি চ্যারিটেবল ক্যানসার হাসপাতাল স্থাপনের ইচ্ছে আছে। তিনি বলেন, 'যেখানে আমি বিনা পারিশ্রমিকে আমৃত্যু কাজ করতে চাই। মূলত দরিদ্র ও অসহায় মানুষকে আমি বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে চাই।'